কবুতরের জাত, ওজন এবং বাসস্থান

কবুতরের জাত, ওজন এবং বাসস্থান ইতিহাস থেকে জানা যায় বহু আদিকাল থেকে মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। সে সময় মানুষ দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। এছাড়াও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশেও প্রধানত মাংস ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কবুতর পালন করা হয়ে থাকে।

 পৃথিবীতে প্রায় ৬০০ জাতের কবুতর আছে । কবুতরের বাচ্চাকে স্কোয়াব বলে । স্কোয়াব বা মাংস উপাদনের জন্যঃ হোয়াইট কিং , তেক্সোনা, সিল্ভার কিং, হাম কাচ্ছা , ডাউকা, গোলা হোমার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । 

চিত্তবিনোদনের জন্যঃ ময়ূরপঙ্খী , সিরাজি, ফ্যান টেইল, গিরিবাজ , লোটন ইত্যাদি অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত। গিরিবাজ কবুতর উড়ন্ত অবস্থায় শূন্য ডিগবাজী খেয়ে মানুষের চিত্তকর্ষণ করে ।

 জাতভেদে কবুতরের গড় ওজন ( গ্রাম ) জাতের নাম বয়স্ক স্কোয়াব বা মাংসল বাচ্চা হোয়াইট কিং ৭৫৫  ৫০০ কারনাউ ৭০০  ৪৫০ হোমার ৭৩০  ৪০০ ফ্রান্স মনডেইন ৭৫০  ৫৫০ সুইস মনডেইন ৮০০ ৬০০   

কবুতরের খাদ্য ( feeds ) কবুতর সাধারণত গম, ভুট্টা, চাল, কাউন, যব, কলাই, খেসারি, সরিষা ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে ।
 ঘরের সামনে পাত্রে খাদ্য রেখে দিলে খেয়ে নেয় । স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি এবং উৎপাদনের জন্য এদেরকে সুষম খাদ্য দেওয়ার প্রয়োজন । 
মুরগির জন্য তৈরি সুষম খাদ্য কবুতরকেও দেওয়া যেতে পারে । 
কবুতরের খাদ্য ১৫-১৬% আমিষ থাকা প্রয়োজন । 
প্রতিটি কবুতর দৈনিক ৩৫-৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে । কবুতরের বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধি এবং বয়স্ক কবুতরের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যর জন্য ঝিনুক চূর্ণ , চুনাপাথর , কাঠ কয়লা চূর্ণ, হাড়ের গুড়া ও লবণ দিয়ে গ্রিট মিকচার বা খনিজ মিশ্রিত তৈরি করে খেতে দিতে হয় ।

 এছাড়া প্রতিদিন কিছু কাঁচা শাকসবজি কবুতরকে খেতে দেওয়া প্রয়োজন । কবুতরের সুষম খাদ্য তালিকার নমুনাঃ শস্যদানা শতকরা হার ১ নং তালিকা ২ নং তালিকা ৩ নং তালিকা ভুট্টা ভাঙ্গা ৩৫ ৩০ ৩০ গম ভাঙ্গা ২০ ২০ ১৫ সরিষা ১০ ১০ ১০ ছোলা ভাঙ্গা ২০ ২৫ ২৫ সয়াবিন মিল ১০ ১০ ১৫ চালের কুঁড়া ৪.৫ ৪.৫ ৪.৫ খাদ্য লবণ ০.৫ ০.৫ ০.৫ মোট ১০০ ১০০ ১০০ 
কবুতরের বাচ্চার খাদ্য ও খাদ্য গ্রহণ বচ্চার বয়স ২৮ দিন না হওয়া পর্যন্ত নিজেরা ঠোঁট দিয়ে কোন খাদ্য দানা গ্রহণ করতে পারে না । এর আগে পায়রা- পায়রি নিজেরা খাবার খেতে তা বাচ্চাদের ঠোঁট ঠোঁট রেখে খাইয়ে দেয় । বাচ্চাদের জন্য প্রথম সপ্তাহে কোন বাড়তি খাবার সরবরাহও প্রয়োজন হয় না ।
 স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরের খাদথলিতে তৈরি দুধ জাতীয় বস্তু খেয়ে এ সময়ে বাচ্চারা বাড়তে থাকে । এ দুধ কবুতরের দুধ নামা পরিচিত । ১৪ দিন পর্যন্ত উচ্চ আমিষ সম্পন্ন ( ১৭.৫% ) পিজিয়ন মিল্প মিশ্রিত খাদ্য সরবরাহও পেয়ে স্কোয়াব বা বাচ্চা দ্রুত বেড়ে উঠে । ২৮ দিন পর বাচ্চার পাখা গজায়, এরা উড়তে শেখে এবং ঠোঁটের সাহায্য নিজের খাদ্য নিজে খেতে পারে । পানি (WATER ) কবুতরের জন্য ঘরের কাছাকাছি মাটির গামলা বা পাত্রে পানির ব্যবস্থা রাখতে হয় । সারাদিন এ পাত্র থেকে এরা পানি পান করবে এবং সময় সময় গোসল করবে । প্রতিদিন গামলা বা পাত্র পরিস্কার করে পরিস্কার পানি দিতে হবে । পাত্রে তিন চতুর্থাংশ পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে ।  

কবুতরের রোগ প্রতিরোধ ( PIGEONS DISEASE PREVENTION ) কবুতরের রোগব্যাধি তুলনামুলকভাবে কম । নিচে কবুতরের কয়েকটি প্রধান রোগ ও তার প্রতিকার বর্ণনা করা হল- কবুতরের কয়েকটি প্রধান রোগ রোগের নাম রোগের লক্ষণ প্রতিকার প্রয়োগের বয়স ও সময় প্রয়োগ পদ্ধতি বসন্ত শরীরের পালকবিহীন স্থানে ফোস্কা হয় । খাওয়ার অসুবিধা হয় । পিজিয়ন পক্স টিকা ব্যবহার করা হয় । ৪ সপ্তাহ বয়সে এ রোগের টিকা দিতে হয় । 
বুকে বা পায়ে পালক তুলে ছিদ্রযুক্ত সুচের সাহায্য এ টিকা দিতে হয় । সানফার ডাইজিন পউডার রোগের দেখা দিলে স্যাভলন বা ডেটল দিয়ে পরিস্কার করে দিনে দুইবার সালফার ডাইজিন পাউডার লাগাতে হবে । কলেরা শরীরের তাপ মাত্রা বৃদ্ধি , হঠাৎ মৃত্যু , ডাইরিয়া, শ্বাস কষ্ট , অরুচি , ওজন হ্রাস, পিপাসা বৃদ্ধি ইত্যাদি। আক্রান্ত কবুতরেরকে টেরামাইসিন ক্যাপসুল বা ইনজেকশন অথবা কসুমিক্স প্লাস নামক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয় । রোগ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ মত পানিতে অথবা মুখে বা ইনজেকশন হিসেবে । রক্ত আমাশয় বা ককসিডিওসিস রক্ত মিশ্রিত মলত্যাগ , ফ্যাকাসে ভাব , দুর্বলতা এবং পালক ঝুলে পড়া ই, ইস, বি-৩ বা এমবাজিন জাতীয় ওষুধ দিতে হয় রোগ দেখা দিলে বা রোগের আশংকা থাকলে । ডাক্তারের পরামর্শ মত পানিতে মিশিয়ে এ ওষুধ খাওয়াতে হয়। ই ইস বি-৩ প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ওষুধ মিশিয়ে খাওয়াতে হবে । কৃমি দুর্বল , ওজন হ্রাস, ডাইরিয়া, রক্ত শূন্যতা ও পিপাসা বৃদ্ধি ডাক্তারের পরামর্শ মতো কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে । রোগ দেখা দিলে বা প্রতি ৩ মাস পরপর। ডাক্তারের পরামর্শ মতো মুখে অথবা পানিতে মিশ্রিত ওষুধ খাওয়াতে হবে । 

Comments