পান চাষ কনটেন্টটিতে পান কীভাবে চাষ করা যায়, চাষ করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে কিনা, এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচ, এর পুষ্টিমান এবং সর্বোপরি এর মাধ্যমে কীভাবে বাড়তি আয় করা সম্ভব, সে বিষয় সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
পান চাষ
পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় উৎসবসহ, বিয়ে-শাদীতে পানের খুব চাহিদা আছে। আমাদের দেশে বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, খুলনা, জামালপুর, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে পানের চাষ হয়। সাধারণত বরজ তৈরি করে পানের চাষ করতে হয়। অনেক স্থানেই সুপারি গাছ এবং অন্যান্য গাছের গোড়ায় পানগাছ লাগানো হয়। এসব পানকে বলা হয় গাছপান। একটি পানের বরজ ১০-২০ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। এরপর নতুন স্থানে বরজ করে পান চাষ করতে হয়। আবহাওয়া, মাটি, জাত, চাষাবাদ পদ্ধতি ইত্যাদির কারণে স্থানভেদে পানের ফলন কম বেশি হয়।
বাজার সম্ভাবনা
পান সংগ্রহের পর বাছাই না করে স্থানীয় বাজারে কমদামে বিক্রি করা যায়। তবে বাছাই করে বিক্রি করলে দাম বেশি পাওয়া যায়। দেশের পানের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ব্যাপক হারে পান রপ্তানি হচ্ছে। উন্নত পদ্ধতিতে ভালো জাতের পান চাষ করে তা রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে।
পান চাষের পদ্ধতি
পানের জাত
বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, বরিশাল ও ঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়। বিভিন্ন অঞ্চলে যেসব জাতের পান চাষ হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
* পানের জাত ও অঞ্চল
জাতের নাম
|
অঞ্চল
|
চালতা গোটা
|
বরিশাল
|
মহানলী
|
বরিশাল
|
চেরফুলী
|
বরিশাল
|
মিঠাপান
|
চট্টগ্রাম ও বরিশাল
|
সাচিপান
|
মহেশখালী
|
গাছপান
|
উখিয়া, টেকনাফ, এবং সিলেট
|
বাংলাপান
|
রাজশাহী
|
মিষ্টিপান
|
যশোর
|
ভাবনা
|
যশোর
|
ভোলাপান
|
ভোলা
|
ঝালপান
|
যশোর
|
ভাওলা
|
ময়মনসিংহ
|
রংপুরী পান
|
রংপুর
|
সন্তোষী
|
নবাবগঞ্জ
|
জাইলো
|
বাগেরহাট
|
এছাড়া বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ,রহমতপুর থেকে উচ্চফলনশীল, বিভিন্ন গুণাবলী সম্পন্ন এবং রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বারিপান-১, বারিপান-২ এবং বারিপান-৩ নামে তিনটি পানের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি
- পান চাষের জন্য সবচেয়ে অনুকূল আবহাওয়া হচ্ছে খরিফ মৌসুম।
- উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পান চাষের জন্য উপযোগী।
- সূর্যের আলোতে পান ভালো হয়না তাই পান চাষের জন্য কৃত্রিম ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
- পানের জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে।
- কম বৃষ্টিপাত, শুষ্ক আবহাওয়া, উচ্চ তাপমাত্রা, প্রচন্ড বাতাস এবং বেশি ঠান্ডা আবহাওয়ায় পান ভালো হয়না।
- সাধারণত উঁচু জমি যেখানে পানি দাঁড়ায় না এমন দো-আঁশ মাটি পান চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
- লালচে দো-আঁশ মাটিতেও সঠিক পরিমাণে জৈব ও পলিমাটি মিশিয়ে পান চাষ করা যাবে।
- অনেকদিন পতিত অবস্থায় আছে এমন এঁটেল মাটিও পান চাষের জন্য উপযোগী।
- জমির কাছে সেচের পানির উৎস থাকতে হবে।
- পান চাষের জন্য নির্বাচিত জমির মাটি একদিকে বা দু’দিকে ঢালু থাকতে হবে।
জমি তৈরি
বেড তৈরি
পানের কাটিং তৈরি
চারা রোপণ
চারা রোপণের সময়
স্থানীয় আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে চারা রোপণের সময় ঠিক করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানের চারা লাগানো হয়ে থাকে। কোথাও আবার শীতের শুরুতে এবং শীতের শেষেও পানের চারা লাগানো হয়। নিচে অঞ্চলভেদে পানের চারা লাগানোর সময় দেয়া হলো-
সেচ ও নিষ্কাশন
লতা নামানো
চাষের সময় পরিচর্যা
সার প্রয়োগ
কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভাল ফলন পেতে হলে পান চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার ব্যবহার করতে হবে, তাহলে মাটির গুণাগুন ও পরিবেশ ভাল থাকবে।
পান সংগ্রহ
সতর্কতা
রোগবালাই ও প্রতিকার
পান গাছের প্রধান রোগ হচ্ছে শিকড় মরা, পাতা পচারোগ, পাতার দাগ বা ক্ষত রোগ, লতা পচা রোগ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন পোকামাকড় এবং ছোট ছোট মাকড়সার আক্রমণেও পানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানের রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। পোকার আক্রমণের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।
মূলধন
পান চাষ শুরু করার জন্য ১৫০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়-স্বজন, সরকারী ও বেসরকারী ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
* ১বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে পান উৎপাদনের জন্য
তথ্যসূত্র : মাঠকর্ম, চাটমোহর, পাবনা, অক্টোবর ২০০৯
পান চাষ করার আগে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে পান চাষের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। পান চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে।
পান একটি জনপ্রিয় ফসল। পান চাষ এবং বিক্রি করে দেশে যেমন অর্থ উপার্জন করা যায় তেমনি বিদেশে পান রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।
প্রশ্ন ১ : কোন ধরণের জমি ও মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী ?
উত্তর : উঁচু জমি এবং দোঁআশ মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী।
প্রশ্ন ২ : কোন মৌসুম পান চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো ?
উত্তর : খরিফ মৌসুম পান চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।
প্রশ্ন ৩ : কোন আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী ?
উত্তর : উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া পান চাষের জন্য উপযোগী।
|
Comments
Post a Comment