সুপার কলা
এম আব্দুল মোমিন
কলা এমন একটি ফল যা সারা বছর এবং সব দেশেই পাওয়া যায়। আমরা যে খাবার খাই, পুষ্টিগুণের কারণে তা সরাসরি মস্তিস্ক থেকে শরীর ভালো লাগা এবং ভারসাম্য রার নির্দেশ পাঠায়। কলা এ কাজটি করে খুবই দ্রুত, যার ফলে কলা খাওয়ার পর মেজাজ ভালো হতে খুব বেশি সময় লাগে না। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা, তাদের জন্য কলা খুবই দরকারী একটি খাবার।
কলার অনেক গুণ রয়েছে। কলা শুধু ফিট থাকতে সাহায্য করে না, ‘কলা’ ঝটপট এনার্জি দেয়, মানুষকে সুন্দর ও সুশ্রী করে এবং আনন্দিত থাকতে বড় ভূমিকা পালন করে। চলুন কলার গুণাগুণ সম্পর্কে আরো কিছু জানা যাক। ‘কলা’ কেন ফিট রাখে? কলাতে রয়েছে শর্করা, মিনারেল, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম। যা দ্রুত শরীরে এনার্জি এনে দেয়। পটাশিয়াম শরীরের এনজাইমকে সক্রিয় রাখে এবং মাংসপেশিকে কোমল ও মসৃণ করে নার্ভকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। তাই অনেকে দিনের শুরুতেই একটি কলা খেয়ে ভালোভাবে দিন শুরু করেন। বিশেষ করে ছাত্রদের বেশ কাজে দেয় কলা।
কলাতে রয়েছে মিনারেল, আয়রণ, ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ সহ বেশ কয়েকটি ভিটামিন। এই সব কিছুর মিশ্রণ ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। আরো রয়েছে প্রচুর প্রোটিন এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ৮টি অ্যামিনো অ্যাসিড। কলা শুধু শরীরের ভেতরকেই ভালো রাখে না, বাইরের সৌন্দর্যকেও বাড়িয়ে তোলে। কলা ছোট-বড় সবার জন্যই উপাদেয়। হলুদ রং-এর কলা অর্থাৎ পাকা কলা শরীরে এনার্জি এনে দেয় এবং পাকস্থলিকে সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে।
অনেকে প্রশ্ন করেন কলা কি মোটা করে? কলায় ক্যালোরি আছে ঠিকই কিন্তু এটা মোটা করে এধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং কলা খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। কলা বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। যেমন, কাঁচা কলার তরকারী, কলার তৈরি বিশেষ ধরণের কেক, কলার চিপস, মিল্কশেক, আইসক্রিম, বিস্কুট ইত্যাদি। কলার সালাদ দারুন উপাদেয়। কলা এবং ডালের মিশ্রণে তৈরী সালাদ খেতে লোভনীয়।
কলার আদি জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপে, যা আজকের ইন্দোনেশিয়া হিসেবে পরিচিত। জার্মানিতে রয়েছে কলার মিউজিয়াম। অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যম জার্মানিতে কলা সম্পর্কিত একমাত্র মিউজিয়ামটি সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে জার্মানিতে কলা আসে যা মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হয়। শীত প্রধান দেশ বলে জার্মানিতে কলা জন্মায় না বিভিন্ন দেশ থেকে জার্মানিতে আনা হয়। বলা বহুল্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিগত বছরে জার্মানির কোনো কোনো বাগানেও কলা গাছ দেখতে পাওয়া গেছে। শিল্পী ব্যার্নহার্ড স্টেলমাখার ১৯৯১ সালের ২২শে জুন জার্মানির শ্লেসভিগ-হলস্টাইন রাজ্যে কলার এই মিউজিয়ামটি তৈরি করেন।
মজার খবর হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের লাখো মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে বিজ্ঞানীরা এবার জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে একটা বিশেষ জাতের কলা ফলিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের কথায়, পুষ্টিমানের বিচারে এই কলা হচ্ছে একেবারে ‘সুপার বানানা’। অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা বলছেন, এই কলার আলফা ও বিটা ক্যারোটিন শরীরে যাওয়ার পর ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হবে। সব ঠিক থাকলে আগামি ২০২০ সাল নাগাদ উগান্ডায় এই কলার উৎপাদন শুরু হবে পূর্ণোদ্যমে। পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদিত যে ‘সুপার বানানা’ ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মানুষের ওপর ছয় সপ্তাহের পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখবেন, এই কলা আসলে কতটা কার্যকর।
এই গবেষণা প্রকল্পটি পরিচালনা করছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির একদল গবেষক? আর তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন? গবেষকরা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাঁরা চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়ার মতো একটি অবস্থায় পৌঁছাতে পারবেন?
পূর্ব আফ্রিকার অনেক দেশেই রান্নায় কাঁচা কলা ব্যবহার করা হয়। এটি ওই অঞ্চলের অন্যতম প্রধান খাদ্য হলেও স্থানীয় কলায় আয়রন ও ভিটামিন ‘এ’ থাকে অনেক কম। ভিটামিন ‘এ’-র স্বল্পতার কারণে প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে তিন লাখেরও বেশি শিশু। এ কারণে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে বিজ্ঞানীরা স্থানীয় কলার জাতকে রূপান্তরিত করছেন ‘সুপার বানানা’য়। আর এ জন্য যে জিন প্রকৌশল প্রয়োজন তা ইতোমধ্যে শেষ করেছেন তাঁরা।
বাইরে থেকে দেখলে সাধারণ কলার সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য চোখে পড়বে না। তবে খোলস ছাড়ানোর পর এর রঙে থাকবে অনেক বেশি কমলা আভা। এই রঙ স্থানীয়দের খুব একটা অপছন্দ হবে না বলেই মনে করেন গবেষকরা।
লেখকঃ সিনিয়র লিয়াঁজো অফিসার
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনিস্টিটিউট
Comments
Post a Comment